মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের চলমান উত্তেজনার মধ্যে এবার প্রশ্ন উঠেছে – যুক্তরাষ্ট্র কি সরাসরি এই সংঘাতে জড়াতে চলেছে?
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একদিকে কূটনৈতিক সমাধানের কথা বললেও, অন্যদিকে তাঁর সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্য ও পদক্ষেপ যুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
🗣️ কূটনৈতিক সমাধানের প্রতিশ্রুতি, কিন্তু…
মাত্র কিছুদিন আগে ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে বলেছিলেন, “আমরা একটি কূটনৈতিক সমাধানে অঙ্গীকারবদ্ধ।”
কিন্তু এরপরই ইসরায়েল ইরানে আক্রমণ চালালে ট্রাম্প জানান, তিনি ইরানকে চুক্তির জন্য ৬০ দিনের সময় দিয়েছিলেন, যা ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে।
রবিবার তিনি আবার বলেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি হওয়া উচিত এবং তিনি নিজে সেটিতে সহায়তা করতে চান।
⚠️ যুদ্ধের ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা
সোমবার জি-৭ সম্মেলন থেকে আগেভাগে কানাডা ত্যাগের প্রস্তুতির সময় ট্রাম্প হঠাৎ বলেন,
“ইরান পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে না এবং তেহরান থেকে সবাইকে অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়া উচিত।”
পরে এয়ারফোর্স ওয়ানে তিনি জানান, তিনি যুদ্ধবিরতির জন্য নয়, বরং “এর চেয়েও বড় কিছু”র জন্য ওয়াশিংটনে ফিরছেন।
🧨 ইসরায়েলি হামলা ও পারমাণবিক স্থাপনা
ইসরায়েলের আক্রমণে ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনার উপরের অংশ ধ্বংস হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই কেন্দ্রটি ৬০% বিশুদ্ধতায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছিল, যা বোমা তৈরির জন্য ৯০%–এর নিচে হলেও, বৈদ্যুতিক উৎপাদনের চেয়ে অনেক বেশি।
আইএইএর মতে, ফোরদোতে অবস্থিত অন্য একটি পারমাণবিক কেন্দ্র যা পাহাড়ের গভীরে, সেটি এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
🇺🇸 যুক্তরাষ্ট্র কি সামরিকভাবে যুক্ত হবে?
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা Arms Control Association–এর কেলসি ডেভেনপোর্ট বলেন,
“ইসরায়েল যদি ভূগর্ভস্থ এসব স্থাপনায় আঘাত হানতে চায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের বোমার সাহায্য প্রয়োজন।”
এমনকি আল–জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্টিমসন সেন্টারের ফেলো বারবারা স্লেভিন বলেন,
“ট্রাম্প সবসময় বিজয়ী দলে থাকতে চান, এবং বর্তমানে তিনি ইসরায়েলকে বিজয়ী ভাবছেন।”
✈️ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রস্তুতি
- শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে বড় সংখ্যক ট্যাংকার বিমান পাঠিয়েছে।
- সোমবার USS Nimitz রণতরি দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে পাঠানো হয়েছে।
- মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র আরও যুদ্ধবিমান পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।
🎯 বিশ্লেষকদের মত
ইরানি ইতিহাসবিদ আলী আনসারি বলেন,
“ইসরায়েলের প্রাথমিক সফলতায় ট্রাম্প জড়াতে পারেন। যুদ্ধের হুমকি ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে পারে।”
তিনি আরও বলেন,
“যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কিছু ছাড় পেলে ইরান তা সম্মানজনকভাবে গ্রহণ করতে পারে। তবে ইসরায়েলের কাছ থেকে তারা তা মানবে না।”
🔎 উপসংহার:
যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে এখনো যুদ্ধে জড়ানোর ঘোষণা না দিলেও, সামরিক প্রস্তুতি ও ট্রাম্পের অবস্থান থেকে এটা স্পষ্ট যে তারা কূটনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি যুদ্ধের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
সুত্রঃ Prothomalo